আহমদ ছফার চিঠি

বাংলা-জার্মান সম্প্রীতি
১১.৭.৯১

দাদা, আদাব নেবেন।

একটুখানি অপরাধবোধ নিয়েই আপনাকে লিখছি। আমি জার্মানী থেকে ফিরেছি মার্চের মাঝামাঝি। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে আপনার সঙ্গে দেখা হয় নি কথাটা ভাবতে আমার কষ্ট হয়। নানা কিছুর মধ্যে না চাইলেও জড়িয়ে পড়তে হয়েছে। বেঁচে থাকা মানে কর্ম করা এটা তো আপনার কাছ থেকেই শিখেছি।

‘অলাতচক্র’ বইটি এখনো অসমাপ্ত থেকে গেলো। বইটি আমি অবহেলা করে  ফেলে রেখেছি সে কথা ঠিক নয়। এই বইটির মধ্যে আমি আমার জাতি ও দেশ সম্পর্কে বিশেষ কিছু বক্তব্য রাখতে চাই। আমার মনে হচ্ছে তাতে আমি সফলও হয়েছি। কিন্তু একটি কথা: বইটি যেভাবে ছাপা হয়েছে, তাতে দৃষ্টি আকর্ষণের সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। সে জন্য আমিই দায়ী। লেখাটি তো আমার প্রেস থেকেই ছাপা হয়েছে। অযোগ্য মানুষকে সাহায্য করলে কোনো কাজে আসে না এটা নতুন করে প্রমাণিত হলো। পুরোনো ফর্মাগুলো ফেলে দিয়ে আবার নতুনভাবে ছাপাতে চাই। বলা বাহুল্য এই বাড়তি খরচটা আমিই করবো। এ ব্যাপারে আপনার সদয় মতামত জানতে পেলে খুশী হবো।

আরেকটা ব্যাপারে আপনার প্রতি আমার সামান্য অনুযোগ আছে। আপনি ‘সূর্য তুমি সাথী’র একটি নতুন সংস্করণ বের করার কথা বলেছিলেন। স্টলে গিয়ে খোঁজ করে দেখলাম বইটি প্রকাশিত হয় নি। আপনার নিশ্চয়ই নানা রকম অসুবিধা আছে। তথাপি আমি বলবো এই বইটি আপনাদের বিশেষ মনোযোগের দাবি রাখে। বইটির একটি জার্মান অনুবাদ কিছু দিনের মধ্যেই প্রকাশিত হবে আশা করছি। লেখাটি কতো ভালো আমাদের দেশের সমালোচকরা বুঝতেই পারেন নি।

আমি কোনো দল করিনে এবং ছোটো ছোটো মানুষদের মধ্যে মিশে ছোট হতে পারিনে সেটাই আমার অপরাধ এবং আমাকে অবহেলা করার কারণ সেটাই। এ অবস্থার কোনোদিন পরিবর্তনও বোধ করি ঘটবে না।

সাম্প্রতিককালে ইংরেজিতে আমার একটি ভ্রমণ কাহিনী বেরিয়েছে। কপি অবশ্যই আপনাকে দেবো। আপনার সঙ্গে দেখা হলে আমি খুবই আনন্দিত হই। দেখা করার একটি উপলক্ষ তৈরির জন্য চিঠিটা লিখলাম। যাতে আপনার অপরিচিত মনে না হয়।

ইন্দিরার এখানে টঘওঈঊঋ-এ একটি চাকুরী হওয়ার কথা আছে। আশীর্বাদ করবেন।

আপনি কেমন আছেন? বৌদিকে আমার শ্রদ্ধা জানাবেন। স্বপনসহ সবাইকে ভালোবাসা।

 

ইতি
আপনার স্নেহধন্য
আহমদ ছফা

 

 

উৎস: আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত, চিঠিপত্রে চিত্তরঞ্জন সাহা (ঢাকা: মুক্তধারা, ২০০৯), পৃ. ৫১-৫২

পুনর্মুদ্রণ: সর্বজন, নবপর্যায় ১৯, ৩০ জুলাই 

২ Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।