“আমি সত্যের প্রতি অবিচল একটি অনুরাগ নিয়ে চলতে চাই”

 

মহাত্মা আহমদ ছফার এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হইয়াছিল বাংলা ১৩৯৯ সালের ২৩ শ্রাবণ তারিখে ‘বাংলাবাজার পত্রিকা’ নামক একটি দৈনিকে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করিয়াছিলেন সাংবাদিক রাজু আলাউদ্দিন ও জুলফিকার হায়দার। ‘সর্বজন’ পত্রিকার জন্য ইহা সংগ্রহ করিয়াছেন সৈয়দ মনজুর মোরশেদ। আমরা তাঁহাদের সকলের ঋণ স্বীকার করিতেছি।

আহমদ ছফার তুলনা আহমদ ছফাই। তাঁহার লেখা যেমন অনন্য, বলাও তেমন অতুলনীয়। গোটা ছয়টি প্রশ্নের উত্তরে তিনি এখানে একটা জাতির সংকটের ছবি অনিন্দ্যসত্য ভাষায় তুলিয়া ধরিয়াছেন। তিনি গিয়াছেন সংকটের একেবারে মর্মমূলে। তিনি বলিয়াছিলেন আমাদের জাতীয় সংকটের মূলে আছে আমাদের দেশি বুদ্ধিব্যবসায়ীদের অন্তর্গত সংকট — তাঁহাদেরই চরিত্র ও দায়িত্বহীনতা। সত্যের অনুরাগে তাঁহারা অবিচল নহেন।

আহমদ ছফার মতে, ‘লেখকের কাজ হচ্ছে মানুষের স্বাধীনতা বিস্তৃত করা, চিন্তার সীমানাকে বিস্তৃত করা।’ তিনি মনে করেন সত্য উদঘাটনই লেখকের কাজ কারণ ‘সত্যই একমাত্র মানুষকে উদ্ধার করতে পারে।’ বাংলাদেশে একমাত্র আহমদ ছফার পক্ষেই বলা সম্ভব ছিল, ‘আমি সত্যের প্রতি অবিচল একটি অনুরাগ নিয়ে চলতে চাই’।

‘বাংলাবাজার পত্রিকা’য় প্রকাশের সময় এই সাক্ষাৎকারের শিরোনাম সরবরাহ করিয়াছিলেন সাংবাদিক বন্ধুরা। তাঁহাদের দেওয়া শিরোনাম ছিল কঠিন: ‘আহমদ ছফা: প্রজ্ঞার আলো’; আমরা নতুন কোমল নাম রাখিলাম: ‘আমি সত্যের প্রতি অবিচল একটি অনুরাগ নিয়ে চলতে চাই’; বলা বাহুল্য, আমরা আহমদ ছফারই মুখনিসৃত একটি অমৃত হইতে এই নামটি লইয়াছি।

সলিমুল্লাহ খান

১ ডিসেম্বর ২০১৩

 

বাংলাবাজার পত্রিকা: কম্যুনিজমের বিপর্যয়কে আপনি কিভাবে দেখেন?

আহমদ ছফা: যখন কম্যুনিজম ছিল তখন থার্ড ওয়ার্ল্ডের মানুষের সামনে একটা অপশন ছিল। এটা ছিল এরকম যে আমরা পশ্চিমা সমাজব্যবস্থার বাইরেও অন্যরকমভাবে আমাদের সামাজিক সমস্যাবলি সলভ করার চেষ্টা করতে পারি। এই বিশ্বাসটাকে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে।

সুতরাং এখন আমাদের জন্য দরকার একধরনের বিকল্প উপায়। সমগ্র অবস্থাটাকে একেবারে অন্যরকম চিন্তাচেতনা দিয়ে ভাবতে হবে। এটা করতে না পারলে যা হবে [তা অভাবনীয়]। যেমন এই সন্ত্রাসের সৃষ্টি। এখন বাংলাদেশে এমন একটি অবস্থা এসেছে — আমি তো মনে করি এ সময়ে ঐসব এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশনগুলো একেবারে দুই বছরের জন্য বন্ধ করে দেয়া উচিত। বন্ধ করে দেয়া হোক। বন্ধ করে দিয়ে এই মাস্টার এবং ছাত্র সবাইকে গ্রামে পাঠানো হোক। তাহলে এই সন্ত্রাসটা বন্ধ করা যাবে। আর ইউনিভার্সিটিগুলো তো এমনিতেই বন্ধ থাকে। মাস্টাররা তো না পড়িয়েই মাইনে পাচ্ছে। সুতরাং এইসব শিক্ষিত মাস্টার ও ছাত্রদেরকে গ্রামে পাঠিয়ে গণশিক্ষার কাজে ব্যবহার করা হোক। এক একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের পেছনে তাদের বাবা-মা প্রচুর টাকা খরচ করে, তার পরেও বছরে একটা ছেলের পেছনে সরকারের বিরাট অঙ্কের টাকা ব্যয় হয়। এই ছেলেরা যদি এভাবে মারামারি করতে থাকে — ব্যাটারা বন্ধ রাখুক এক বছর। বন্ধ রেখে সংশোধন করুক।

এখন এই রোগ এতই জটিল হয়ে গেছে যে, মাস্টাররাও সংক্রমিত হয়ে গেছে। সুতরাং এক বা দুই বছর বন্ধ রেখে সংস্কার করা হোক। এ সময়ের মধ্যে আমাদের এমফেসিস দিতে হবে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি এডুকেশনের ওপর। কারণ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা যদি শক্ত না হয় তাহলে শিক্ষার কোন বুনিয়াদ সৃষ্টি হয় না। এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার প্রাইমারি স্কুল। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ কমিয়ে এটা প্রাইমারি খাতে ইনভেস্ট করা হোক। আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঘটনা শুনলাম — এটা বন্ধ করে দিলে কি হয়? যদি ইউনিভার্সিটিতে জ্ঞানচর্চা না হয়, পবিত্রতা না থাকে, মানবতার মৌলিক শিক্ষাগুলোর চর্চা না হয় তাহলে এটা বন্ধ করে দিলে কি হয়! এমনিতেও তো পাঁচ বছরের জায়গায় বারো বছর লাগে। সুতরাং দুই বছর বন্ধ রেখে টেনশনটাকে ডিফিউজ করা হোক। ইটিজ দা বেস্ট সলুশন।

ভাস্কর: শামীম সিকদার

ভাস্কর: শামীম সিকদার

বাংলাবাজার পত্রিকা: মাঝে মাঝে তো সন্ত্রাসী ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় দুই বা তিন মাসের জন্য বন্ধ রাখা হয় এবং খোলার পর আগের মতই সন্ত্রাস চলতে থাকে। সুতরাং বন্ধ করে দিলেই কি সন্ত্রাস দূর হবে?

আহমদ ছফা: এক বা দুই মাসের জন্য নয়, একদম দুই বছরের জন্য বন্ধ করে দিতে হবে। এখানে কোন ক্লাস হবে না, ইলেকশন হবে না, কোন পার্টি হবে না, নো ছাত্রলীগ, নো বিএনপি, নো জামাত এবং এই দেড় দুই লাখ ছেলেকে গ্রামে পাঠিয়ে গ্রামসংস্কার কাজে নিয়োগ করতে হবে।

বাংলাবাজার পত্রিকা: বর্তমান মুহূর্তে সরকার ও বিরোধী দল রাজনীতিতে কি ধরনের ভূমিকা রাখছে বা ভবিষ্যতে এরা দেশকে কোন দিকে নিয়ে যাবে বলে মনে হয়?

আহমদ ছফা: এটা আমি জানি না। রাজনৈতিক দলগুলো সে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ যেই হোক তারা যে কাজটা করে, দেখতে হবে তার সামাজিক ডিমান্ড আছে কিনা। আজকে বিএনপি সরকারের রবীন্দ্রজয়ন্তী করার কথা না। খালেদা জিয়া রবীন্দ্রনাথ বোঝে না, [তবু তারা এটা] এ কারণেই করে যে, এটার সামাজিক ডিমান্ড আছে। সুতরাং সামাজিক ডিমান্ড হচ্ছে রাজনীতির চেয়ে বড়। আমাদের রাজনীতির বয়স কত? ৩০ বছর? কিন্তু বাংলাদেশের সমাজের বয়স ১০০০ বছর।

রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের সবচাইতে বড় গুণ হল এই, অন্যান্য লেখকরা সব সময় চলমান রাজনীতি নিয়ে লিখেছেন, তিনি লিখেছেন সমাজ নিয়ে। সমাজটা হাজার বছরের, পলিটিকসটা খুব রিসেন্ট। এখানে সবাই পলিটিকস করতে চায় কিন্তু সমাজকে বাদ দিয়ে। পলিটিকস যদি সমাজকে কন্ট্রোল করে তাহলে এর ফল শুভ হয় নয়। সমাজই পলিটিকসকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এখানে যে স্বর্গ থেকে এসে একটা [লোক] সবকিছু ঠিক করে দিয়ে যাবে তা না। আমাদের নিজেদের মধ্য থেকে একটা রেনেসাঁসের দরকার। এর আগেও একাজটি করা যে হয়নি তা না। এমনকি আকরম খাঁ বা মানিক মিয়া সাহেবও তাদের লিমিটেড ক্যাপাসিটি থেকে এটা করেছেন। এটা করার জন্য যা দরকার তা হলো মাটি ও মানুষের প্রতি আনুগত্য। কিন্তু এখন এই কাজটা কারা করবে? মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য যে প্রচণ্ড মানসিক শক্তি দরকার তা তো নেই।

আধুনিক মানের যে আর্ট এটা তো নেই কারো এবং সবাই তো লোভে [পড়ে] কাজ করছে। আমাকে কবি বলুক, আমাকে সাহিত্যিক বলুক — এই যে লোকের একটা আকাক্সক্ষা এটাও এক ধরনের লোভ। এর ফলে একজন লোক নিজেকে অতিক্রম করে যাবার স্পৃহাটা হারিয়ে ফেলে।

তবে আশার কথা হচ্ছে, আমাদের দেশটা খারাপ দেশ নয়। আমাদের মানুষ খারাপ মানুষ নয়। কদিন আগে এক মার্কিন ভদ্রলোক এসেছিলেন, আমাদের ল এন্ড অর্ডার সিচুয়েশন নিয়ে অনুযোগ করলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম নিউ ইয়র্কের পুলিশ বাজেট কত আর ঢাকার পুলিশ বাজেট কত? নিউ ইয়র্কের পুলিশ বাজেট আমাদের জাতীয় বাজেটের আড়াই গুণ বেশি আর ক্রাইমের পরিমাণ ১০ গুণ বেশি। আমাদের দেশে চুরি-ছিনতাই হচ্ছে কিন্তু লস এঞ্জেলসে যে ঘটনা ঘটে গেল — বন্যার মত লোকজন এসে সব লুটেপুটে নিয়ে গেল — তো এদেরকে আমরা সিভিলাইজড সোসাইটি বলি কেন? আমাদেরও তো একটা সভ্যতা আছে। আমাদের যে একেবারে আশা নেই এটা ঠিক নয়।

কিন্তু এই ভাল সমাজটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার দায়িত্ব যাঁদের ওপর তাঁরা কি করছে? এখানকার ইন্টেলেকচুয়াল ক্রাইমের পরিমাণ শুনলে তুমি অবাক হয়ে যাবে। সুতরাং আমাদের ইন্টেলেকচুয়ালরা সমাজকে কিছু দিতে পারছেন না। একটা ক্রাইসিস চলছে। আমি নিজে চেষ্টা করে ছয়টি বাংলা উপন্যাস জার্মানিতে অনুবাদ করানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। আশ্চর্যের কথা হলো, ওখানে পাঠানোর মত ছয়টি উপন্যাস আমি পাইনি। বঙ্কিম বাংলা গদ্যে রেনেসাঁসের সূচনা করেছিলেন। কিন্তু তিনি গোঁড়া সাম্প্রদায়িক, তাঁর নাম উচ্চারণ করলেও অজু করতে হয়। তারপরও তিনি সমগ্র বাংলা গদ্যকে একটা স্টার্টিং দিয়েছিলেন। এটা আমাদের সাহিত্যে কেউ দিতে পারেননি।

বাংলাবাজার পত্রিকা: এটা কি বলা যায় যে মূল্যবান জিনিসটা পপুলারিটি পায় কিন্তু অনেক পরে?

আহমদ ছফা: মূল্যবান জিনিস পপুলার না হলেও কোন ক্ষতি নেই এবং কম লোক বোঝে বলেই এটা মূল্যবান। আমি জনপ্রিয় লেখকদের মত না লিখে কোন অন্যায় তো করিনি। লেখকের কাজ হচ্ছে মানুষের স্বাধীনতা বিস্তৃত করা, চিন্তার সীমানাকে বিস্তৃত করা। আর একজন লেখক তো নট নন, ফিল্ম একটর নন, রাজনৈতিক প্রচারক নন। তাঁর কাজ হচ্ছে সত্যকে উদঘাটন করা, সত্যই একমাত্র মানুষকে উদ্ধার করতে পারে। আমি সত্যের প্রতি অবিচল একটি অনুরাগ নিয়ে চলতে চাই।

বাংলাবাজার পত্রিকা: বাইরের সংস্কৃতির অবাধ অনুপ্রবেশকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

আহমদ ছফা: জীবনানন্দ বলেছেন, ‘দূর পৃথিবীর গন্ধে ভরে ওঠে আমার এই বাঙ্গালীর মন’। এখন তো বাইরের পৃথিবী আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এই যে ডিশ এন্টেনা আসলো, সারা [পৃথিবী] ঘরের কোণে চলে এসেছে, পৃথিবীর প্রবাহগুলো তরঙ্গের মত আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। আমাদের উচিত এ সময় একটি জাতীয় মানস তৈরি করা, যাতে করে পৃথিবীর তরঙ্গগুলো আমরা রিসিভ করতে পারি। কিন্তু আনফর্চুনেটলি, আমাদের দুই প্রধান নেতা ভাসানী ও শেখ মুজিব — এ দুজনের যদি আধুনিক শিক্ষার আলো থাকত! মাওলানা সাহেব ছিলেন ট্রাডিশনাল লিডার এবং শেখ সাহেব ছিলেন একেবারে জননন্দিত ব্যক্তি। রাজনৈতিক অঙ্গনে শেখ মুজিবের অবদান খুবই মূল্যবান। তিনি হাজার বছরের সবচাইতে মূল্যবান ব্যক্তি কিন্তু একটা রাষ্ট্র চালানোর [জন্য] যেসব বিষয়ে আধুনিক শিক্ষা দরকার ছিল, [যেমন] আমলাতন্ত্র, শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি — এগুলো তাঁর দখলে ছিল না। এই অভাব কাটিয়ে উঠতে হবে। এখন যাঁরা আছেন তাদেরকে সবদিক দিয়ে আধুনিক করে গড়ে তুলতে হবে।

বাংলাবাজার পত্রিকা: গণ আদালতের বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখেন?

আহমদ ছফা: গোলাম আযমের প্রতি জনগণ যে রায় দিয়েছে, এটা ঠিক আছে। খুবই ভাল হয়েছে। এটার দরকার ছিল। সরকারগুলো বছরের পর বছর যা ইচ্ছা তাই করবে! জনগণেরও একটা রায় আছে, জনগণ সেটা সাহসের সাথে জানিয়ে দিয়েছে। স্বাধীনতার এত বছর পরও রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একটা স্পষ্ট সীমারেখা সৃষ্টি হয়েছে।

কিন্তু একটা বিষয়ে আমার ভয় হচ্ছে। এখন আমরা যেভাবে এগুচ্ছি তাতে গোলাম আযমকে একটা শহীদের মর্যাদা দিতে যাচ্ছি। জামাত-শিবিরকে মোকাবেলা করতে হলে একটু গভীরে যেতে হবে। এই যে পার্লামেন্টে জামাত এতগুলো সিট পেল — এটা কেন পেল? এটা তলিয়ে দেখতে হবে। যেসব অপকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে জামাত জনমনে প্রভাব বিস্তার করছে সেগুলোর পাশাপাশি পাল্টা মতামত ও বক্তব্য নিয়ে আমাদেরকে জনগণের কাছে যেতে হবে।

আমি একবার গ্রামে গিয়ে আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে দেখলাম যে সে ক্যাসেটে সাঈদীর বক্তৃতা শুনছে। আমার মনে হলো, গ্রামের অন্তঃপুর পর্যন্ত যে ব্যক্তির প্রভাব পৌঁছে গেছে তার এই জনপ্রিয়তার উৎসটা কি।

সাঈদী প্রতিটি মাহফিলে বক্তৃতার জন্য সম্মানী নেন পঁচিশ হাজার এক টাকা এবং এক বছরের আগে তাঁর শিডিউল পাওয়া যায় না। ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা দিয়ে ও ক্যাসেটের রয়ালটি বাবদ সাঈদী যে অর্থ পায় তা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মাইকেল জ্যাকসন [তুল্য] বলা যেতে পারে। সুতরাং এসব চিন্তা করে সাঈদীর বক্তৃতাগুলো আমি একদিন ভাল করে শুনলাম।

শুনে আমার যেটা মনে হলো তা এই। সাঈদী যদি ওয়াজ না করে গান গাইতেন, তাহলেও খুব জনপ্রিয় গায়ক হতেন। দ্বিতীয়ত তাঁর বলার মধ্যে তিনি একধরনের ড্রামাটিক সাসপেন্স তৈরি করেন। তিনি একজন ভাল অভিনেতা এবং শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রাখার ক্ষমতা রাখেন। তৃতীয়ত নাটক বা গান শুনতে পয়সা লাগে, ওয়াজ শুনতে পয়সা লাগে না। চতুর্থত যৌন আবেদনমূলক ছায়াছবি মানুষ যে কারণে এনজয় করে, সাঈদীর বক্তৃতায় তাও রয়েছে। ওঁর বক্তৃতায় আধুনিক ব্লু-ফিল্মের উপাদান রয়েছে।

তিনি যদি একঘণ্টা বক্তৃতা করেন তার মধ্যে অন্তত দশ মিনিট থাকবে যৌনতা। পঞ্চমত ব্লু-ফিল্ম দেখার পর দর্শকের মনে এক ধরনের পাপবোধ জাগে, অন্যদিকে ওয়াজ শোনার পর মনে পূন্যের সঞ্চার হয়। সুতরাং আমি দেখলাম যে সাঈদীর জনপ্রিয়তা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অতএব আমাদের যেটা উচিত ছিল তা হলো এ বিষয়ে একটা পুস্তিকা লিখে জনগণকে সচেতন করে তোলা। আমরা এটা না করে সাঈদীর বক্তৃতাসভা পণ্ড করার লড়াইয়ে নেমেছি এবং এর ফলে তাঁকে একজন স্টার বানিয়ে দিয়েছি।

 

পুনর্মুদ্রণ: সর্বজনশাহবাগ আন্দোলন বর্ষপূর্তি সংখ্যা, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪

১ Comment

G. M. Zahidul Islam শীর্ষক প্রকাশনায় মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।